মাটি থেকে প্রায় ১৯ হাজার ৩শ’ ফুট উপরে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে ভারত। জম্মু ও কাশ্মীরের লাদাখ অঞ্চলে এই সড়ক নির্মাণ করেছে ভারতের বিআরও (Border Roads Organisation)।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, সড়কটি নির্মাণে সেখানকার ‘প্রজেক্ট হিমাঙ্ক’ নামের একটি সংস্থাও সহযোগিতা করে।
সড়কটি তৈরি হওয়ার ফলে লাদাখের লেহ থেকে ২৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চিশুমলে এবং দামচক নামক দুটি গ্রামের যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হচ্ছে। এই সড়কের বিষয়ে বিআরও’র মুখপাত্র বলছিলেন, গ্রাম দুটি সীমান্তের এত কাছে যে সেখান থেকে পাথর ছুঁড়লে তা চীনের ভূখণ্ডে গিয়ে পড়বে।
মাটি থেকে প্রায় ২০ হাজার ফুট উচ্চতায় হানলে’তে ৮৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ ছিল অসম্ভব একটি কাজ। কিন্তু সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অবশেষে এটি নির্মাণ হওয়ায় এখন বিশ্ব রেকর্ডের অধিকারী হতে যাচ্ছে সড়কটি।
সড়কটি নির্মাণ প্রসঙ্গে ‘প্রজেক্ট হিমাঙ্ক’এর প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার ডি এম পুরভিমাথ জানান, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রকল্পটি তাদের বাস্তবায়ন করতে হয়। মাটি থেকে প্রায় ২০ হাজার ফুট উপরে কাজ করতে গিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে তাদের রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়।
পুরভিমাথ জানান, বিরুদ্ধ প্রকৃতিতে সড়কটি নির্মাণ করতে গিয়ে বেশ সময় ব্যয় হয়। এখানে কায়িক শ্রমের চাইতে যন্ত্রের ওপর ছিল বেশি ভরসা। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এটি এমন এক জায়গা যেখানে গ্রীষ্মের সময়ই তাপমাত্রা থাকে হিমাঙ্কের ১০ থেকে ১২ ডিগ্রি নিচে। আর শীতকালে তা রূপ নেয় মাইনাস ৪০ ডিগ্রিতে।
তিনি বলেন, শুধু তাপমাত্রাই প্রধান বাধা নয়! মাটি থেকে ২০ হাজার ফুট উচ্চতায় থাকা অঞ্চলটির বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। ফলে মেশিন চালালেও কর্মীদের সুস্থ থাকতে ১০ মিনিট পর পর অক্সিজেনের জন্য নিচে নামতে হয়েছে।
এ ছাড়া সড়ক নির্মাণের উপকরণও সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এতটা উপরে ভারি যন্ত্রপাতি বয়ে নেয়ার কাজটি ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। সেগুলো স্থাপন, মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণ করতে গিয়েও বেগ পেতে হয়েছে কর্মীদের।
প্রায় আকাশে বসে দীর্ঘদিন কাজ করতে গিয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে জানান প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা পুরভিমাথ। তিনি বলেন, স্বল্প অক্সিজেনে কাজ করতে গিয়ে অনেকের স্মৃতিতে বিরূপ প্রভাব পড়তে দেখা গেছে। কেউ কেউ দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। অনেকেই এখন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন।
তবে সব বাধা উপেক্ষা করেও অসম্ভব কাজটিকে তারা সম্ভব করে তুলেছেন বলে জানান ৭৫৩ বিআরটিএফ’র কমান্ডার প্রদীপ রাজ। যিনি সড়ক নির্মাণের সময় দেখাশোনার কাজ করেছেন। তিনিও বলেন, এজন্যে তাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হয়। কর্মীদের সবাইকে বিশেষ প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছিল।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.